সুমন দাস, বাগেরহাট
আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে বাগেরহাটের চিতলমারীতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। উপজেলার চন্ডিভিটা সার্বজনীন মন্দির ও পাঁচপাড়া গ্রামের শক্তি উপসনালয় মন্দিরে এ বছর তৈরি হয়েছে রেকর্ড সংখ্যক প্রতিমা। দর্শনার্থীদের দাবি, এবছর জেলার মধ্যে ৬০৫ টি মন্দিরে পূজা উদযাপন হলেও সর্বাধিক প্রতিমা নিয়েই দুর্গোৎসবের আয়োজন হচ্ছে এ উপজেলায়।
চিতলমারীর চরবানিয়ারীর পশ্চিমপাড়ার চন্ডিভিটায় তৈরি হয়েছে প্রায় ২০০টি প্রতিমা এবং পাঁচপাড়ায় তৈরি হয়েছে দেড় শতাধিক প্রতিমার মন্ডপ। অর্থাৎ দুই মন্দিরে মিলিয়ে প্রতিমার সংখ্যা সাড়ে তিন শতাধিক। প্রতিমার এই বিপুল আয়োজনে এবারের শারদীয়া দুর্গোৎসবের বাগেরহাট জেলার মূল আকর্ষণ সৃষ্টি হয়েছে চিতলমারী। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব। গত বছরের তুলনায় এ বছর দ্বিগুণ আয়োজনে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
প্রতিমাশিল্পীরা দিনরাত খাটুনি খেটে প্রতিমা গড়ছেন। রঙ-তুলির আঁচড়ে চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা। অলঙ্কার, শাড়ি, মুকুট সবকিছুতেই লেগে আছে উৎসবের ছোঁয়া। অহনা বিশ্বাস নামে স্থানীয় এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিমাগুলো দেখতে এসেছি, সত্যিই অনেক সুন্দর হয়েছে। প্রতিমার রঙ, সাজসজ্জা আর শৈল্পিকতা দেখে আমি মুগ্ধ। তাই স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার পথে প্রতিদিনই প্রতিমা দেখতে চলে আসি। এখানে এসে মনে হয় যেন উৎসবটা শুরু হয়ে গেছে। প্রতিদিন প্রতিমার কাজ কতটা এগিয়েছে সেটা দেখতেও আমার ভালো লাগে। এবারের দুর্গোৎসব আমাদের গ্রামের মানুষের জন্য বিশেষ কিছু হয়ে থাকবে।
প্রতিমা ও বিগ্রহ তৈরীর ভাস্কর্যশিল্পী কিশোর বিশ্বাস ও সৌরভ সরকার বলেন, প্রায় তিন মাস ধরে আমরা ৫ জনে এই প্রতিমাগুলো তৈরি করেছি দিন-রাত পরিশ্রম করে। এবারের প্রতিমার সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি, তাই আমাদের খাটুনিও দ্বিগুণ হয়েছে। তবে মানুষের আগ্রহ ও আনন্দ দেখে আমাদের সমস্ত কষ্ট দূর হয়ে যায়। প্রতিমা শেষ হওয়ার পর যখন মানুষ মুগ্ধ হন, তখনই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়।”
চ-ীভিটা মন্দির কমিটির উপদেষ্টা যুগ্ম সচিব কালাচাঁদ সিংহ জানান, চ-ীচরণ নামের এক ব্যক্তির পরিত্যক্ত ভিটায় চ-ীভিটা সর্বজনীন মন্দির প্রতিষ্ঠিত। এখানে প্রায় ৬৪ বছর আগে থেকে দুর্গাপূজা হয়। গতবার থেকে এবার প্রতিমা-বিগ্রহের সংখ্যা বেড়ে দুই শ’র বেশি করা হয়েছে।’ প্রতিমা ও বিগ্রহ তৈরীর ভাস্কর্যশিল্পী কিশোর বিশ্বাস জানান, পাঁচজন শিল্পীকে নিয়ে তিন মাস ধরে মূর্তিগুলো তৈরি করছেন।’
শক্তি উপাসনালয় মন্দির কমিটির সভাপতি গৌতম কুমার ম-ল বলেন, আমরা চেষ্টা করছি চিতলমারীর মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় আয়োজন করার। প্রতিমার সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে, তাই মানুষের ভিড়ও দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছি। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সবাই আনন্দের সঙ্গে পূজা উপভোগ করুক।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের বাগেরহাট আহ্বায়ক প্রদীপ বসু সন্তু ও সম্পাদক মোহন লাল হালদার জানান, এ বছর বাগেরহাট জেলায় মোট ৬০৫টি পূজা ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বিঘেœ পূজা উদযাপনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।’
জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, সুষ্ঠু শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানান, এবার দুর্গোৎসবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলার মোট ৬০৫টি পূজা ম-পের মধ্যে ৯০টিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে কঠোর নিরাপত্তা চাদরে আনা হবে।