জেলা প্রতিনিধি, জামালপুর
দেশের জ্বালানি খাতে নতুন আশার আলো ছড়ানো জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় বাপেক্স কর্তৃক আবিষ্কৃত জামালপুর-১ অনুসন্ধান কূপ খনন কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জনাব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। পরিদর্শন শেষে তিনি জানিয়েছেন, এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক প্রায় ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব, যা একটানা ১২ বছর পর্যন্ত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যাবে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপুরের তিনি মাদারগঞ্জের তারতাপাড়া গ্রামে অবস্থিত গ্যাস ফিল্ড এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এসময় তার সঙ্গে জ্বালানি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) একটি বিশেষজ্ঞ দল উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “এটি দেশের জন্য একটি অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ। বাপেক্সের প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা এই গ্যাসক্ষেত্রটি পেয়েছি। প্রাথমিক সমীক্ষা অনুযায়ী, এখান থেকে দৈনিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে, যা দিয়ে প্রায় ১২ বছর পর্যন্ত সরবরাহ চালু রাখা সম্ভব। এটি আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে এবং জ্বালানি নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
তিনি আরও বলেন, ” প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী, দেশের নিজস্ব জ্বালানি সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই গ্যাস দ্রুততম সময়ের মধ্যে উত্তোলন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বাপেক্স সূত্রে জানা গেছে, মাদারগঞ্জের এই গ্যাসক্ষেত্রের গ্যাসের চাপ এবং গুণগত মান বেশ সন্তোষজনক। জামালপুরের মাদারগঞ্জে অবস্থিত কূপটির গ্যাস স্তরের পুরুত্ব (১৪৪১-১৪৪৪.৫) মাত্র সাড়ে ৩ মিটার। ডিএসটির শুরুতে ১২০০ পিএসআই (প্রেসার বর্গ ইঞ্চি) চাপ থাকলেও পরে ১১০০ পিএসআই এর নিচে নেমে আসে।
গ্যাস বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য হলে ফিল্ডটি হবে দেশের ৩০ তম গ্যাসফিল্ড। আবিষ্কৃত ওই স্তর থেকে দৈনিক ৫ মিলিয়ন পর্যন্ত গ্যাস পাওয়ার আশা করছে পেট্রোবাংলা। ২০২৩ সালে দ্বীপ জেলা ভোলাতে দেশের ২৯ তম গ্যাস ফিল্ড (ইলিশা), ২০২১ সালে জকিগঞ্জ ২৮ তম গ্যাস ফিল্ড আবিস্কৃত হয়েছে। যদিও ওই দু’টির কোন ফিল্ড থেকেই গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে না।
এদিকে, নিজেদের এলাকায় গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের খবরে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। তারা আশা করছেন, এই গ্যাসক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে এলাকায় শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র বদলে দিতে সহায়ক হবে।
এসময় বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ ফজলুল হকের সভাপতিত্বে বিশেষ অথিতি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব মোঃ সাইফুল ইসলাম, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মোঃ রেজানুর রহমান। পরিচালক অপারেশন এন্ড মাইন্স, পেট্রোবাংলা প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম, জামালপুর জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম, জামালপুর জেলা অতি: পুলিশ সুপার, মো.সাইদুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাদির শাহ প্রমূখ।