বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের স্ব স্ব দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নিশ্চিত করতে প্রবাসে এনআইডি কার্যক্রম শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে নয়টি দেশে এই কার্যক্রম চালু আছে। আগামী ১৫ জুলাই জাপানে চালু হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও আটটি দেশে এআইডি কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
যেসব দেশে এই সেবা চালু হচ্ছে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন করে দূতাবাসে এসে ছবি তুলে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারবেন প্রবাসীরা।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন কমিশন ৪০টি দেশে কার্যক্রমটি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নিয়েছিল। যার মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতিক্রমে বর্তমানে নয়টি দেশের ১৬টি স্টেশনে নিবন্ধন ও ভোটার করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশগুলো হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা।
এ দেশগুলোতে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর সব প্রস্তুতি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের রয়েছে। অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কার্যক্রম শুরু করে দিতে পারব।
আব্দুল মমিন সরকার, এনআইডি কর্মকর্তা
অবশিষ্ট ৩১টি দেশে এ কার্যক্রম শুরুর ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের মতো অগ্রাধিকারভিত্তিতে সম্মতি প্রদানের জন্য ইসি সিনিয়র সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। যার মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাপানে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের কার্যক্রম শুরু করার সম্মতি দেওয়ায় আগামী ১৫ জুলাই এ কার্যক্রম শুরু হবে। বাকি দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ওমান, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান, লিবিয়া, সুদান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, মিসর, রুনাই, মৌরিশাস, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, গ্রিস, স্পেন, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস।
প্রবাসে এনআইডি কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের নয় দেশে কার্যক্রম চলমান। জাপানেও শুরু হয়ে যাবে কিছু দিনের মধ্যে। এছাড়া যেসব দেশে বাংলাদেশের নাগরিকরা বেশি বসবাস করেন এমন আরও আটটি দেশে কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নিয়েছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছি। কার্যক্রম শুরুর জন্য আমরা সব প্রস্তুতি গুছিয়ে নিচ্ছি, যাতে অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু করে দিতে পারি।’
ইসির এনআইডি অনুবিভাগের নিবন্ধন ও প্রবাসী শাখার পরিচালক মো. আব্দুল মমিন সরকার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পপনা ৪০টি দেশে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করা। তারমধ্যে জাপানের কার্যক্রম শুরু হলে ১০টি দেশে এ কার্যক্রম চলমান হবে। বাকি যে ৩০টি দেশ রয়েছে সেখান থেকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র, মালদ্বীপ, তুরস্ক, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওমান, মিসর ও ফ্রান্সে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের কার্যক্রম শুরুর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমতি চাওয়া হয়েছে।’
আটটি দেশে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ দেশগুলোতে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর সব প্রস্তুতি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের রয়েছে। অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কার্যক্রম শুরু করে দিতে পারব।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে সেবা সম্প্রসারণের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দূতাবাসগুলোর কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স পাওয়া গেলে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি-বায়রাসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে নির্বাচন কমিশন তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছে ৪০টি দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের আধিক্য রয়েছে। এসব দেশকে টার্গেট করে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এসব দেশে এক কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ জন প্রবাসী রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি প্রবাসী রয়েছেন সৌদি আরবে, ৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ জন। আর সবচেয়ে কম রয়েছেন নিউজিল্যান্ডে দুই হাজার ৫০০ জন।
ইসির তৈরি সবশেষ প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানসংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নয়টি দেশ থেকে মোট আবেদন পড়েছে ৪৭ হাজার ৩৮০টি। যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছে তিন হাজার ৬৯২টি আবেদন। উপজেলা নির্বাচন অফিসে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন আছে ২২ হাজার ৫৭৭টি আবেদন। তদন্ত শেষে আবেদন অনুমোদন হয়েছে ২০ হাজার ৬২৪ জন প্রবাসীর। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে ৪৮৭টি আবেদন। আর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আঙুলের ছাপ ও ছবি নেওয়া হয়েছে ২৯ হাজার ৫৯৩ জন প্রবাসীর। সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৯ হাজার ৬৯৮টি। আর সবচেয়ে কম আবেদন পড়েছে অস্ট্রেলিয়ায় ১৮২টি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে প্রবাসে এনআইডি সরবরাহের উদ্যোগ হাতে নেয়। এরপর ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনে ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন হয়। এরপর সৌদি আবর, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও এ সুযোগ চালু করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা থমকে যায়। পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে আগের আবেদনগুলো পাশ কাটিয়ে নতুন করে এ কার্যক্রম শুরু করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। সেই কার্যক্রমকেই আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিচ্ছে বর্তমান নাসির উদ্দিন কমিশন।