জেলা
প্রতিনিধি, রংপুর
রংপুরের
পীরগাছা উপজেলায় ভাঙন রোধে ঘাঘট
নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে
জিও ব্যাগ বসানোর কাজে অনিয়মের অভিযোগ
পাওয়া গেছে। জিও ব্যাগ বসানোর
স্থানের ১০ ফিটের মধ্যে
অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করেছে
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেই বালু দিয়ে
জিও ব্যাগ ভর্তি করা হচ্ছে। এতে
বাঁধা দেয়ায় স্থানীয় এলাকাবাসীদের পুলিশের দেয়াসহ নানা হুমকি দেয়ার
অভিযোগও রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রবি এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে।
এনিয়ে চরম ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা।
তারা দ্রুত সময়ে অনিয়ম বন্ধসহ
পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্থানীয়
এলাকাবাসীর অভিযোগ ও পানি উন্নয়ন
বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, প্রতিবছর বর্ষায় পীরগাছা উপজেলার উপজেলার পশ্চিম তালুক ইশাদ খামার এলাকায়
নদীভাঙন দেখা দেয়। এতে
শত শত ঘরবাড়ি, জমি
বিলীন হয়ে যায়। এ
অবস্থায় ভাঙন ঠেকাতে ২৭
লাখ বরাদ্দ দেয় পানি উন্নয়ন
বোর্ড। এই টাকায় পশ্চিম
তালুক ইশাদ খামার গ্রামে
৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার
প্রস্থে ঘাঘট নদীর বাম
তীর রক্ষার কথা। এ জন্য
নদীর তীরে ১৭৫ কেজির
ধারণ ক্ষমতার দুই হাজার ৭০৯টি
জিও ব্যাগ এবং ৬৫ কেজি
ওজনের স্যান্ড (বালু) সিমেন্ট গানি ব্যাগ পাঁচ
হাজার ৯০০টি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন
করছেন রবি এন্টারপ্রাইজ নামে
একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে
দেখা গেছে, প্রকল্প এলাকায় যেখানে জিও ব্যাগ ফেলা
হয়েছে তার সাত-আট
ফিটের মধ্যে অবৈধ ড্রেজার মেশিন
দিয়ে গভীর করে বালু
উঠানো হয়েছে। আবার ওই বালু
দিয়ে ভর্তি করা হয়েছে জিও
ব্যাগ। জিও ব্যাগে মোটা
বালু দেওয়ার নিয়ম থাকলেও চিকন
বালু দেওয়া হচ্ছে। জিও ব্যাগ ভর্তির
বালু প্রায় ৪ লাখ ৭৪
হাজার ২৫০ কেজি ও
গানি ব্যাগ ভর্তির জন্য ৩ লাখ
১৯ হাজার ৫৮৩ কেজি বালুর
মধ্যে শুধুমাত্র দুই ট্রলি বাহির
হতে ক্রয় করা হয়েছে
বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বাকি সমস্ত বালু
নদী থেকে উঠানো হয়েছে
বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় আব্দুল জলিল ও আজিজুল
ইসলামসহ একাধিক এলাকাবাসী।
প্রত্যক্ষদর্শী
স্থানীয় নুরুল ইসলাম বলেন, উপরের দিকে কিছু ৬৫
কেজির গানি ব্যাগ ফেললেও
নিচে ৮০ ভাগ বস্তায়
৪৫-৫০ কেজি সিমেন্ট
বালু ভর্তি করে ফেলা হয়েছে।
ছয় ভাগের এক অংশ সিমেন্ট
দেওয়ার কথা থাকলেও ১০
থেকে ১২ ভাগের এক
অংশ সিমেন্ট দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় সিটিজেন চার্ট নেই। তাই প্রকল্প
ব্যয় বিষয়ে বিস্তারিত কেউ জানে না।
স্থানীয়রা নিয়ম মেনে কাজের
দাবি জানালে ঠিকাদারের লোকজন তাদের পুলিশে ধরিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরণের হুমকি দিয়েছেন।
এদিকে
আব্দুল লতিফ ও মতিয়ার
রহমান বলেন, মিক্সার মেশিনে সামান্য সিমেন্ট দিয়ে এতে বেশি
পরিমাণ বালু দেওয়া হয়,
মেশিন চালু করলে বালু
মিশ্রিত হয় না, পরবর্তীতে
ওই অবস্থায় বস্তায় ভর্তি করে ফেলানো হয়।
২০ বস্তা সিমেন্ট দিয়ে ২শ গানি
ব্যাগ তৈরি করা হয়েছে।
বেশির ভাগ কাজ করা
হয়েছে রাতের আঁধারে।
নদী
সংলগ্ন আছিয়া বেগম বলেন, পানি
উন্নয়ন বোর্ডের লোক ও ঠিকাদার
আমাকে বলেছেন নদী থেকে বালু
উঠাইতে না দিলে এখানে
বস্তা ফেলা হবে না।
আমরা গ্রামের সহজ সরল মানুষ
হওয়ার পরও ঠিকাদারের লোক
সব সময় পুলিশ দিয়ে
হয়রানি করার ভয় দেখানোয়
বাধা দিতে পারিনি।
এবিষয়ে
রবি এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার প্রকৌশলী অপু বলেন, পানি
উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনুপস্থিতিতে
রাতে একদিন মাত্র কাজ করেছি। ২০
বস্তা সিমেন্ট দিয়ে দুইশ গানি
ব্যাগ তৈরি করিনি। তবে
সিমেন্টের পরিমাণ কিছু কম হয়েছে।
যে অভিযোগগুলো বলা হয়েছে তা
সঠিক নয়।
সার্বিক
বিষয়ে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের
উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাসেল মাহমুদ জানিয়েছেন, জিও ব্যাগ ফেলানোর
স্পটের নিকটে বালু উঠানোর বিষয়ে
আমার জানা নেই। নদীর
তীর রক্ষা করা আমাদের কাজ
আর বালু উঠানো বন্ধ
করা ইউএনও’র কাজ। তিনি
আরও বলেন, নদীর তীর সংলগ্ন
এলাকা থেকে ড্রেজার দিয়ে
বালু উত্তোলন করলেও সমস্যা নেই। তবে কাজের
বিষয়ে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়া
হবে।