বিনোদন ডেস্ক
প্রেমিকাকে পেতে প্রেমিকের বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা এবং অকালে জীবন দান, এর আগে এই দেশে এমন ঘটনা ঘটেনি। যেমনটা ঘটেছে ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ ময়ূরপঙ্খীতে।
এদিন ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসের বিজি-১৪৭ উড্ডয়নের পর ‘ম্যাডাম ফুলি’-খ্যাত নায়িকা সিমলার প্রেমিক/স্বামী পলাশ আহমেদ বোমাসদৃশ বস্তু ও অস্ত্র দেখিয়ে বিমানটি ‘ছিনতাইয়ের’ চেষ্টা করেন। ওই সময় ছিনতাইকারী পলাশ নায়িকা সিমলার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন বলে জানান কমান্ডো অভিযানে থাকা বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা। শেষবার প্রেমিকার সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন কিনা, সেই তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে প্রাণ নিয়ে সেই কমান্ডো অভিযান থেকে ফেরা হয়নি প্রেমিক পলাশের। নিজের জীবন দিয়ে এটুকু জানান দিলেন, প্রেমিকা সিমলাকে ফিরে পেতেই তার এই ছিনতাই চেষ্টার চিত্রনাট্য।
এই বিমান ছিনতাই এবং তারও আগে সিমলা-পলাশের সত্যিকারের প্রেম-জীবনের পাণ্ডুলিপি নিয়ে নির্মিত হয়েছে ঈদের সিনেমা ‘ময়ূরাক্ষী’। গোলাম রাব্বানীর চিত্রনাট্যে এটি নির্মাণ করেছেন রাশিদ পলাশ। বিমান ছিনতাইয়ের আগেই যে দুজনের সঙ্গে সিনেমা নির্মাণের আগ্রহ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন সিমলা ও পলাশ।
মূলত সেসব স্মৃতিকাতরতা নিয়েই ‘ময়ূরাক্ষী’ সৃষ্টির গল্পটি জানালেন চিত্রনাট্যকার গোলাম রাব্বানী। তিনি বললেন, ‘‘রাশিদ পলাশ এক সন্ধ্যায় হাজির আমার অফিসে। সঙ্গে সিমলা ও মাহি (সিমলার প্রেমিক পলাশের ডাক-নাম)। আমি একটু অবাক। পলাশ বললো, ‘ম্যাডাম ফুলি-২’ বানাবো। স্ক্রিপ্টটা লিখে দিতে হবে আমাকে। আর প্রডিউস করবে মাহি। আমি কিছুটা সময় নিতে চাইলাম বিষয়টা বোঝার জন্য, কিন্তু মাহি আমাকে তখনই সাইনিং মানি দিতে পকেটে হাত দিলো। আমি টাকা নিতে রাজি হলাম না। আরও সময় চাইলাম। সিমলাও খুব করে চাইছে কাজটা দ্রুত শুরু করতে। কিন্তু আমি দ্রুত কিছুই করতে পারি না, সব কাজেই আমার কিছুটা সময় লাগে।’
রাব্বানী কথা আগালেন, ‘সেদিনই প্রথম পরিচয় মাহির সঙ্গে। এরপর আরও কয়েকবার আমাদের দেখা হয়েছে। প্রজেক্টটা নিয়ে কথা হয়েছে। হঠাৎ এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় খবর পেলাম বিমান ছিনতাইয়ের। আমি দ্রুত চলে গেলাম অফিসে। বাংলাদেশে প্রথমবার বিমান ছিনতাই, বড় ঘটনা। নিউজ করতে গিয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো, যখন জানতে পারলাম বিমান ছিনতাইকারী আমাদের মাহি! যার আসল নাম পলাশ। নারায়ণগঞ্জের ছেলে। প্রথম স্ত্রী রেখে নায়িকার (সিমলা) রূপের সম্মোহনের আগুনে জ্বলে পুড়ে শেষ।’
‘ম্যাডাম ফুলি-২’ নির্মাণের স্বপ্ন সেদিনই শেষ। কারণ, প্রযোজক মাহি তো আর নেই। যার আগ্রহ ছিল সিমলাকে নিয়ে ছবিটি বানানোর। সিমলাও নিরুদ্দেশ। তবু কেন জানি গোলাম রাব্বানী ও রাশিদ পলাশের মাথা থেকে সেই ঘটনার রেশ কাটছিল না। দুজনেরই মাথাতেই জমাট হয়ে ছিল সিমলা-মাহির প্রেম ও প্রস্থানের দাগ।
রাব্বানী বলেন, ‘বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনাটি প্রায় শেষ। ভুলেও গেছে অনেকে। কিন্তু আমাদের মগজ থেকে সেটি মুছতে পারছিলাম না। এমনই একটা সময় রাশিদ পলাশ এসে বললো, মাহির গল্পটা বানাই চলেন। পলাশকে বললাম, এই গল্প বানাতে অনেক আয়োজন, অনেক টাকা দরকার। পলাশ তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললো, শুরু করি ভাই, যেভাবে ভালো হয় সেভাবেই করবো, চেষ্টা তো করি।’
এরপর শুরু ‘ময়ূরাক্ষী’র চিত্রনাট্য তৈরি ও শুটিংয়ের প্রস্তুতি। অবশেষে এই ঈদে প্রথম সপ্তাহে মাত্র দুটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। যারা দেখছেন ছবিটি, প্রশংসা করছেন। ছবিটি মুক্তির পর গোলাম রাব্বানীর প্রতিক্রিয়া এমন, ‘‘ময়ূরাক্ষী’ রিলিজের পর থেকে আমার আসলে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে মাহিকে। মাহির চরিত্রে অভিনয় করেছে দীপ। যতবার দীপকে দেখি ততবার মাহিকে মনে পড়ে। একটা মানুষ প্রেমে পড়ে প্রেমের মানুষটাকে হারিয়ে কতটা পাগল হলে বিমান ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে, এই বিষয়টা যতবার ভাবি ততবার মনে হয় প্রেম খুব ভয়ংকর জিনিস। সবাই মাহির মতো প্রেমিক হতে পারে না।’
এদিকে ছবিটি মুক্তির আগেই অজ্ঞাতনামা স্থান থেকে সিমলা হুমকি দিয়েছেন ছবিটির বিরুদ্ধে মামলা করার। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সিনেমাটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবো। সময় হলেই দেখতে পারবেন আমি কী করতে পারি। সব তথ্য প্রমাণ আমি জোগাড় করে রেখেছি।’তবে ছবিটি মুক্তির পর নতুন কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি সিমলার।
বলা দরকার—পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, ২০১৮ সালের ৩ মার্চ সিমলার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের প্রবাসফেরত যুবক পলাশের বিয়ে হয়। পলাশ তার আগের বিয়ের খবর গোপন করায় ওই বছরের ৬ নভেম্বর সিমলা তাকে ডিভোর্স দেন। ডিভোর্সের পরেই ‘হতাশা’ থেকে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন পলাশ।