পাইকারিতে কমে গেছে ভোজ্যতেল বিক্রি, মজা লুটছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা

পাইকারিতে কমে গেছে ভোজ্যতেল বিক্রি, মজা লুটছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা
অর্থনীতি

নিউজ মিশন ডেস্ক

শুধু ভোক্তা নয়, এবার ভোজ্যতেলের এপিট-ওপিট দেখছেন স্বয়ং বিক্রেতারা। এক লাফে ১৪ টাকা দাম বাড়ার পর পাইকারিতে কমে গেছে ভোজ্যতেল বিক্রি। অন্যদিকে দাম বাড়ায় মজা লুটছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দাম বাড়ার বিয়টি আঁচ করতে পেরে অনেক আগেই দোকানে ভোজ্যতেল মজুদ করে রেখেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এতে পাইকারিতে কমে গেছে বিক্রি।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) এ বিষয়ে আলাপকালে বিষয়টি স্বীকার করেছেন পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য, বাজারে ভোজ্যতেলের মজুদ এখন পর্যাপ্ত। অথচ বাড়তি কোনো চাহিদা নেই। রমজানে বাড়তি চাহিদা থাকলেও তখন ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো নিয়ে মিল মালিকরা নানা ফন্দি-ফিকির করে। যা বুঝতে পেরে খুচরা ব্যবসায়ীরা যার যার সাধ্যমত ভোজ্যতেলের মজুদ গড়ে তোলে। কারণ ব্যবসায়ীরা বুঝতে পেরেছে, ভোজ্যতেলের দাম বাড়বেই। তবে ইউনূস সরকারও কমে বোঝেনি। এমন সময় ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছে, যখন বাজারে তেলের চাহিদা তেমন একটা নেই। অন্য সরকারের মতো ভুল না করে এই সরকার মোক্ষম একটা চাল চালিয়েছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা তেলের দাম বাড়ার আগেই কিনে নিয়েছে। দোকানে দেখেন, তেল পড়ে আছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা তেল নিচ্ছে না। নগরীর বড় দোকানগুলো তেল স্টক করে রেখেছে। কেনা দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রিও করছে।

এ অবস্থায় পাইকারি থেকে আপাতত ভোজ্যতেলের কেনার কোনো প্রয়োজন নেই। খুচরা দোকানে মজুদ যা আছে তাতে আরও এক-দেড় মাস চলবে। আর বাড়তি দামের লাভ উঠছে খুচরা ব্যবসায়ীদের হাতে। হাত গুটিতে বসে আছে পাইকাররা। দাম বাড়ানোর ফাঁদে পড়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সরকারিভাবে ভোজ্যতেলের দাম ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করলেও চট্টগ্রামের সবকটি বাজারে কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। খুচরা পর্যায়ে এই তেল বিক্রি হচ্ছে লিটার প্রতি ১৯০ টাকা, আর পাঁচ লিটার বিক্রি হচ্ছে ৯২২ থেকে ৯৩০ টাকায়। 

আর দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে পাইকারিতে মণ প্রতি ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৪৫০ টাকায়, পাম তেলের দাম রয়েছে ৫ হাজার ৮৫০ টাকায়। এছাড়া বেশিসংখ্যক বোতলজাত ভোজ্যতেল নিলে লিটার প্রতি ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

নগরীর বহদ্দারহাট হাটহাজারী স্টোরের দোকানি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সয়াবিন তেল বিক্রি এখন হচ্ছে না বললেই চলে। দোকানে অনেক তেল স্টকে পড়ে আছে। সরকার যে দাম বাড়িয়েছে, সে দামে তেল বিক্রয় করা হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি বিক্রেতা মজুমদার স্টোরের দোকানি উজ্জ্বল মজুমদার বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা তেলের দাম বাড়ার আগেই কিনে নিয়েছে। দোকানে দেখেন, তেল পড়ে আছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা তেল নিচ্ছে না। নগরীর বড় দোকানগুলো তেল স্টক করে রেখেছে। কেনা দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রিও করছে।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুর রহমান বলেন, আমদানিনির্ভর হওয়ায় সয়াবিন তেলের দামটা সম্পূর্ণ মিলের ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে এখন চারটা মিল আছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামের বাজার নিয়ে এ বিষয়ে জানতে পারবেন টিকে গ্রুপ থেকে। বাজারে তেলের দাম নিয়ে তারাই কারসাজি করে।

 তিনি বলেন, বাজারে ব্যবসায়ীর পরিমাণ বাড়লে বাজারব্যবস্থা আরও ভালো হতো। সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে বলতে গেলে ইলিয়াস ব্রাদার্স, দাদা গ্রুপ, মোস্তফা গ্রুপ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আর নতুন করে রিফাইনারি মিল করাটা সময় স্বাপেক্ষ বিষয়।

দাম নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারা বিশ্বে পৃথিবীতে কোথাও কোনো খোলা তেল বিক্রি হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে উৎসাহিত করা হয়। বিষয়টি অস্বাস্থ্যকর হলেও তা নিয়ে কেউ কিছু বলছে না। খোলা তেল বন্ধ করে দিয়ে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনসহ বোতলজাত ও পলিপ্যাক তেল বিক্রি করতে পারে। এতে দাম ও মেয়াদ উল্লেখ থাকলে কোনো ব্যবসায়ী চাইলেও মজুদ করে বাজারে সংকট সৃষ্টি করতে পারবে না।

খুচরা বাজারে সয়বিন তেলের কারসাজি সম্পর্কে জানতে চাইলে টিকে গ্রুপের বিপণন কর্মকর্তা নিউটন মল্লিক বলেন, তেল নিয়ে কারসাজির সুযোগ নেই। তবে গত দুইদিন আগে তেলের দাম পরিবর্তন হয়েছে। তাই চেঞ্জ হয়ে আসতে সময় লাগছে।

তেলের আন্তর্জাতিক বাজার ও দেশীয় মজুদ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর, কাস্টম ও ভ্যাট বিষয়ক সম্পাদক রাইসুল ইসলাম বলেন, ৩১ মার্চ পর্যন্ত সরকার ডিউটি শতভাগ প্রত্যাহার করেছিল রমজানের বাজার ঠিক রাখার জন্য। ৩১ মার্চের পর থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাস্টমসের সফটওয়ারে ডিউটি আগের নিয়মে চালু হয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম নিম্নমুখী। তাই ডিউটি বেড়ে যাওয়ার কারণে যে পরিমাণ দাম বাড়ার কথা, সেটা বাড়েনি।

দাম আরও কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বুধবার (১৬ এপ্রিল) সরকার আবার এআইটি (এডভান্স ইনকাম ট্যাক্স) ৫ শতাংশ প্রত্যাহার করেছে। তাই বাজার পড়তির দিকে। সরবরাহও ঠিক আছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে মজুদও বেশি আছে। আশা করছি, ঈদুল আজহা পর্যন্ত সয়াবিন তেলের কোনো সংকট হবে না।