অনলাইন ডেস্ক
চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শ্রমিক, দিনমজুর, ব্যবসায়ীদেরও যেতে হচ্ছে কারাগারে। রাজধানীতে সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২২৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে রাজধানীতে ২২৯ মামলায় মোট গ্রেফতার ২ হাজার ৭৬৪ জন।
ঢাকার আদালত ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে চলছে স্বজনদের আহাজারি। আদালতে একেকটি ভ্যান আসছে আর তাতে আপনজনের খোঁজে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন উদ্বিগ্ন স্বজনরা। তাদের কেউ ভাই, কেউ সন্তান, কেউ বাবা আর কেউ বা স্বামীর সন্ধানে ভোরের আলো না ফুটতেই এসেছেন আদালতে। গেল কয়েকদিনের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ জড়িত সন্দেহে পুলিশ ও ডিবি পুলিশ তাদের স্বজনদের গ্রেফতার করেছে।
শারমিন আক্তার স্বর্ণা মা ও ১০ বছরের ছোট ভাই জোনায়েদকে নিয়ে আদালতে এসেছেন তার বাবার জন্য। শনিবার বিকালে বাজার করে বাসায় ফেরার সময় তার বাবা আক্তার হোসেনকে আটক করেছে পল্লবী থানা পুলিশ। তিনি বলেন, আমার বাবা গার্মেন্টসের ব্যবসা করেন। গত শনিবার বাজার করে বাসায় ফেরার সময় বাবাকে পুলিশ ধরেছে। আমাদের পরিবারের একমাত্র গার্ডিয়ান আমার বাবা। আমাদের এভাবে হয়রানি করার মানে কী বুঝতে পারছি না। সাধারণ মানুষকে কেন এভাবে হয়রানি করা হচ্ছে? পাশেই অঝোরে কাঁদছিলেন আক্তার হোসেনের স্ত্রী। তিনি বলেন, আমার স্বামীর বয়স ৫০ বছর। তিনি তো কোনো কিছুতে যাননি। তাকে ধরে নিয়ে এসেছে। এখন আমার পরিবারের কী হবে, কে দেখবে আমাদের?
ঢাকা পলিটেকনিকের ইন্টার্ন শিক্ষার্থী সাদ্দাম হোসেন শনিবার কলেজের হলে এসেছিলেন নিজের বই, খাতা ও শিট নেওয়ার জন্য। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তখন তাকে আটকে রাখে। দীর্ঘ ৩-৪ ঘণ্টা নির্যাতনের পর তারা তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে পুলিশ তাকে মোটরসাইকেল পোড়ানো, মারধর, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মামলায় গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
সাদ্দামের ভাই হানিফ বলেন, আমার ছোট ভাই গাজীপুরে আমার কাছেই থাকত। ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার পরই ও বাসায় চলে যায়। গতকাল বই, খাতা, শিট আনার জন্য ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগের বড় ভাইদের ফোন দেয়। তারা ওকে যেতে বলে। ক্যাম্পাসে যাওয়ার পর ওকে রুমে আটকে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা মারধর করেছে। ও এখন স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারছে না। মারধরের পর ওরা আমার ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। আমার ভাই সাধারণ শিক্ষার্থী। সে কোনো ঝামেলায় কখনো যায়নি।
শুধু স্বর্ণা, হানিফই নন, এমন শত শত স্বজনের আহাজারিতে প্রতিদিনই ভারী হয়ে উঠছে আদালতপাড়া। এর মধ্যে ছাত্রদের পাশাপাশি মাঝবয়সি, ব্যবসায়ী, শ্রমিকও রয়েছেন। যাদের সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদের সবাইকেই ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি নাশকতার মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের এক নজর দেখতে এবং আইনি প্রক্রিয়ায় ছাড়িয়ে নিতে আদালতপাড়ায় চলছে স্বজনদের এই আহাজারি।