ফাঁস হওয়া প্রশ্নে যারা চাকরিতে, তাদেরও ধরা উচিত: প্রধানমন্ত্রী

ফাঁস হওয়া প্রশ্নে যারা চাকরিতে, তাদেরও ধরা উচিত: প্রধানমন্ত্রী
জাতীয়

অনলাইন ডেস্ক 

ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষায় বসে যারা সরকারি চাকরিতে ঢুকেছেন, তাদেরকেও ধরা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 

চীন সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে রোববার গণভবনে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, যারা বেনেফিশিয়ারি, যদি তাদের খুঁজে বের করা যায়, তখন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবনেব না কেন? তাদেরতো চাকরি করার কোনো অধিকারই থাকবে নাসুতরাং সেটা খুঁজে দেবে কে? প্রশ্ন হচ্ছে, এটা খুঁজে বের করে দেবে কে? যদি ওরা বলে যে, অমুকের কাছে বিক্রি করেছি, প্রমাণ করতে পারলে সেটা দেখা যাবেতো, আমিও সেটা বিশ্বাস করি যে, বেনিফিশিয়ারি যারা তাদেরও ধরা উচিততাহলে আর ভবিষ্যতে কেউ করবে না 

একটি চক্র প্রায় এক যুগ ধরে পিএসসির অধীনে বিসিএসসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িত বলে ছয়জনের ছবিসহ একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন রোববার প্রচারিত হয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে 

এরপরেই সিআইডি তদন্ত করে ওই ছয়জন ছাড়াও পিএসসি চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী, তার ছেলে সিয়ামসহ মোট ১৭ জনকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা হয়, যার তদন্ত সিআইডি করছে 

ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার ঘটনায় অভিযুক্তরা প্রশ্নপত্র বিক্রি করেঅঢেল সম্পদ গড়েছেনবলে উঠে আসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং তাদের প্রতিবেশীদের কথায় 

বিসিএস পরীক্ষায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের তালিকা প্রকাশ করতে রোববার সরকারকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন দুই আইনজীবী 

মানবাধিকার সংস্থা ‘ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনএর পক্ষে পিএসসি চেয়ারম্যানসচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকেনোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লবমোহাম্মদ কাওছার 

আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিসিএস পরীক্ষায়প্রতারণার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগপ্রাপ্তবিসিএস কর্মকর্তাদের নাম, ঠিকানা, বর্তমান পদবি উল্লেখ করে তালিকা তৈরি করে কর্ম কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে অনুরোধ করা হয়েছে নোটিসে 

চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস নিয়ে আলোচনার মধ্যে যারা এরবেনেফিশিয়ারিতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় সরকারপ্রধানকে 

তাদেরকে খুঁজে বের করার বিষয়ে উত্তরে তিনি বলেন, কারণ ঘুষ যে দেবে আর ঘুষ যে নেবে উভয়েই হচ্ছে অপরাধীউভয়ে অপরাধী, এটা মাথায় রাখতে হবেতো প্রশ্নপত্র যারা ফাঁস করে আর যারা সেই প্রশ্নপত্র ক্রয় করে, দুজনই অপরাধীএতে কোনো সন্দেহ নাইকিন্তু এটা খুঁজে বের করবে কে? সাংবাদিকরা যদি চেষ্টা করে, বের করে দেয়, ব্যবস্থা নেওয়া যাবে 

বিএনপির শাসনামলে নিয়োগ পরীক্ষার দুর্নীতি হওয়ার অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওয়া ভবন থেকে তালিকা পাঠানো হতো আর সেই তালিকায় চাকরি হতো ঢাকা কলেজে পরীক্ষা হয় এবং একটা বিশেষ কামরা তাদের জন্য রাখ হতো 

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর থেকে এই জিনিস সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছিলাম এবং যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ এর পরে, কোটা আন্দোলন-টান্দোলন এসব হবার পর, এই গ্রুপটা আবার কি করে যেন এখানে জায়গা করে ফেলেযেটা এখন ধরা পড়েছে 

তিনি আরও বলেন, ২০১৮, ২০১৯ সালের পর এরা কিছুটা হাত পেয়ে যায়সেগুলোর পেছনে বহুদিন লেগে থেকে থেকে এখন এসে ধরতে পেরেছিযখন ধরা পড়েছে, এটা তদন্ত হবে, বিচার হবে 

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা উদ্ঘাটন করতে গেলেইমেজনষ্ট হওয়ার শঙ্কা সরকারের কেউ কেউ প্রকাশ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, একটা জিনিসঅনেক সময় (বলা হয়) এগুলি ধরতে গেলে এটা প্রচার হলে ভালো হবে না, ইমেজ নষ্ট হবে- আমি তাতে বিশ্বাস করি নাআমি বলি, কিসের ইমেজ নষ্ট হবে? অন্যায়-অবিচার যে করবে, আমি তাকে ধরবইতাতে আমি ইমেজ বা কিছু  পরোয়া করব নাতাদেরকে ধরতেই হবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবেএগুলি যদি সরিয়ে না দেওয়া হয় এগুলো চলতেই থাকবে 

জিয়াউর রহমানের আমলে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দুর্নীতি শুরু হয় অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা অনেকে মনে করতে পারে, আমাদের সময়ে; না, এটা শুরু হয়েছে সেই জিয়াউর রহমানের আমল থেকেইখালেদা জিয়া এসে আরও এক ধাপ বেশিতখন তো তালিকা আসতযা তালিকা সেটা মানতেই হবেনা মানলে কেউ জানে বেঁচে থাকতে পারবে নাএটা ছিল বাংলাদেশের অবস্থা, সেটা ভুলে গেলে চলবে? ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশের অবস্থাটা কি ছিল? কেউ কোনো কথা বলতে পেরেছে?