ভারত মহাসাগরে সোমালীয় জলদস্যুদের কবলেপড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ এবং ওই জাহাজে
থাকা ২৩ নাবিককে উদ্ধারের সবশেষ
কোন বার্তা কারো
কাছেই নেই। সোমালিয়া পুলিশ এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর সম্মিলিত দলের কমান্ডো অভিযান
চালানোর কথা
শোনা গেলেও জাহাজটির মালিকপক্ষ দাবি
করেছিল, এ বিষয়ে
কিছু জানে না
তারা। আবার ১৬
মার্চ রাতের পর
ওই জাহাজ থেকেও
যোগাযোগ করা
হচ্ছে না। এ
অবস্থায় তৈরি
হয়েছে উভয় সংকট।
জলদস্যুদের কবলেপড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ও ২৩ নাবিকের জিম্মি দশার আট
দিন পার হয়েছে।
কিন্তু উদ্ধারের বিষয়ে
কোন পদক্ষেপ নিতে
পারছে না কেউ।
জাহাজের মালিকপক্ষ বলছে, তাদের সাথে
সবশেষ শনিবার (১৬
মার্চ) রাতে এক
নাবিকের কথা
হয়েছে। ওই সময়
তিনি জানিয়েছেন সবাই
সুস্থ আছে। এরপর
আর কারো সাথে
যোগাযোগ হয়নি
বলেই জানিয়েছেন কবির
গ্রুপের মিডিয়া
উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।
তিনি জানান, সমঝোতা
নিয়ে এখনও পর্যন্ত জলদস্যুদের সঙ্গে
যোগাযোগ হয়নি।
আবার সোমালিয়ার পুলিশ
এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর সম্মিলিত দলের
উদ্ধার অভিযান পরিচালনার যে বিষয়টি শোনা
গিয়েছিল, সে
সম্পর্কেও তারা
কিছু জানে না
বলে দাবি করা
হয়েছে। এমন অবস্থায় দুশ্চিন্তায় আছে
নাবিকদের পরিবার। তারা দ্রুত উদ্ধারের দাবি করেছে।
এদিকে শোনা যাচ্ছে,
শুক্রবার জলদস্যুদের নতুন দল জাহাজটির দায়িত্ব নেয়ার
পর থেকে নাবিকদের পরিবারের সঙ্গে
যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া
হয়।
এ অবস্থায়, অভিযান
চালিয়ে জাহাজ ও
নাবিকদের উদ্ধার
কার্যক্রমকে সমর্থন
করছে না মালিকপক্ষ এবং সরকার। এতে
হিতে বিপরীত হতে
পারে বলে মনে
করছে তারা। বিশেষ
করে নাবিকদের জীবনহানির শঙ্কা করছে। একই
মত পোষণ করছেন
নৌ বিশেষজ্ঞরা। বলছেন,
অভিযান না চালিয়ে
সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেয়া
হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন এম আনাম চৌধুরীর মতে, এখন জাহাজ
পুরোপুরি দস্যুদের নিয়ন্ত্রণে। এমন
অবস্থায় অভিযান
পরিচালনা করলে
দস্যুরা ছেড়ে
কথা বলবে না।
তারাও আক্রমণ করবে।
এমনকি নাবিকদের মেরে
ফেলতে পারে তারা।
এতে হিতে বিপরীত
হতে পারে।
এদিকে ১২ মার্চ
জাহাজ জিম্মির পর
বেশ কয়েকবার অবস্থান পরিবর্তন করা
হয়েছে বলে জানা
গেছে। ১৪ মার্চ
রাতে সোমালিয়ার গারাকাদ উপকূল থেকে সাত
নটিক্যাল মাইল
দূরে দস্যুরা প্রথমে
জাহাজটি নোঙর
করে। এরপর গারাকাদ উপকূল থেকে সরিয়ে
১৫ মার্চ ৫০
নটিক্যাল মাইল
উত্তরে জাহাজটিকে নিয়ে
যায়। এরপর গদবজিরান উপকূল থেকে মাত্র
চার নটিক্যাল মাইল
দূরে জাহাজটির সর্বশেষ অবস্থান শনাক্ত
করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
ঘনঘন অবস্থান পরিবর্তন বুঝিয়ে দিচ্ছে দস্যুরা নিজেদের পূর্ণ
নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে
জাহাজটিকে নিতে
এতোবার অবস্থান বদলেছে। ফলে এমন অবস্থায় হুট করেই অভিযান
পরিচালনা করা
ঠিক হবে না।
অন্যদিকে সময়ের
সাথে সাথে বাড়ছে
জাহাজ বিস্ফোরণের শঙ্কা।
আফ্রিকার দেশ
মোজাম্বিক থেকে
৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে
যাওয়ার কথা দুবাইতে। আর কয়লা বোঝাই
করার পর থেকে
প্রতি ২৪ ঘণ্টায়
এ কয়লা পরিমাপ
করার প্রয়োজন পড়ে।
দাহ্য পদার্থ হওয়ায়
এ কয়লা থেকে
প্রচুর পরিমাণ মিথেন
গ্যাস উৎপাদন হয়
এবং কমে যায়
অক্সিজেনের পরিমাণ। তাই সামান্য আগুন
বা একটু ফুলকির
ছোঁয়ায় বিস্ফোরণে উড়ে
যেতে পারে এ
জাহাজ।
এর আগে, সোমবার
(১৮ মার্চ) এক
প্রতিবেদনে বার্তা
সংস্থা রয়টার্স জানায়,
সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ড এলাকাটি অসংখ্য
জলদস্যু চক্রের
ঘাঁটি। আধাস্বায়ত্তশাসিত এই
অঞ্চলটির পুলিশ
বাহিনী জানিয়েছে, তারা
উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে
এবং এমভি আবদুল্লাহকে জব্দ করা জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিয়েছে।
এক বিবৃতিতে পুন্টল্যান্ড পুলিশ বলেছে, আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী অভিযানের পরিকল্পনা করছে
-- এমন রিপোর্ট পাওয়ার
পর পুন্টল্যান্ড পুলিশ
বাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে।
তারও আগে, ১৭
মার্চ ভারত মহাসাগরে বিশেষ কমান্ডো অভিযান
চালিয়ে সোমালিয়ার জলদস্যুদের ছিনতাই করা একটি
বাণিজ্যিক জাহাজ
দখলে নিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। মাল্টার পতাকাবাহী ‘এমভি রুয়েন’
নামের ওই জাহাজটি গত বছরের শেষ
দিকে ছিনতাই করেছিল
সোমালিয়ার জলদস্যুরা।
ভারতের নৌবাহিনী আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ৪০ ঘণ্টার অপারেশনে জলদস্যুদের কবলে
থাকা মাল্টার জাহাজ
এমভি রুয়েনকে উদ্ধার
করা হয়েছে। যুদ্ধজাহাজ ‘আইএনএস কলকাতা’ শনিবার (১৬
মার্চ) জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ওই জাহাজের ৩৫ জলদস্যুকে কোণঠাসা করে ফেলতে সক্ষম
হয়েছে। পরে তারা
আত্মসমর্পণ করে।
একই সঙ্গে ওই
জাহাজ থেকে ১৭
জন নাবিককে অক্ষত
অবস্থায় উদ্ধার
করা হয়েছে। এর
আগে ভারতীয় নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার ওই
জাহাজটির ওপর
দিয়ে চক্কর দেয়ার
সময় জলদস্যুদের একজনকে
হেলিকপ্টার লক্ষ্য
করে গুলি ছুড়তে
দেখা যায় বলে
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে এনডিটিভি।