দীর্ঘ দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা নির্বাচনী কর্মকাণ্ড শেষে ভারতে ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ভোটগণনা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ জুন) দেশটির স্থানীয় সময় সকাল আটটায় সারাদেশে একসঙ্গে ভোটগণনা শুরু হয়।
মোট সাত দফায় এবার দেশে ভোট হয়েছে প্রায় দেড় মাস ধরে। আর নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা হয়েছিল গত ১৬ মার্চ।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোট নেওয়ায় বিকেলের আগেই সারাদেশের নির্বাচনি ফলাফল মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দল বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন জোট ‘এনডিএ’ একটানা তৃতীয়বার দেশের ক্ষমতায় আসার জন্য লড়ছে।
বিজেপির সেই লক্ষ্য সফল হলে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পর নরেন্দ্র মোদিই হবেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি পরপর তিনবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করবেন।
অন্যদিকে বিরোধী শিবিরের মূল জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতারাও আশাবাদী যে তারা সরকার গড়ার জন্য যে গরিষ্ঠতা দরকার, তা অর্জন করতে পারবেন।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ‘এনডিএ’ বা বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বাইরেও অবশ্য বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী আঞ্চলিক দল রয়েছে। অর্থাৎ এই দলগুলো ভোটে লড়েছে কোনও জোটের অংশ না-হয়েই।
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ওড়িশার বিজু জনতা দল, অন্ধ্রের ওয়াই এস আর কংগ্রেস, উত্তরপ্রদেশে বহুজন সমাজ পার্টি প্রভৃতি রাজনৈতিক দল।
গত ১ জুন সপ্তম দফার ভোটের শেষে ভারতের বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা যে সব ‘এক্সিট পোল’ বা বুথফেরত সমীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে, তার বেশিরভাগ জরিপেই অবশ্য বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটকে বিপুলভাবে এগিয়ে রাখা হয়েছে।
তবে ভারতে এক্সিট পোলের পূর্বাভাস সম্পূর্ণ ভুল হওয়ার বহু দৃষ্টান্ত আছে, যার মধ্যে সবশেষ বড় ঘটনাটি ঘটেছে মাত্র মাসছয়েক আগেই। ছত্তিশগড়, রাজস্থান বা মধ্যপ্রদেশে গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রকৃত ফলাফল কোনও এক্সিট পোলই আন্দাজ করতে পারেনি।
ফলে ভারতের ৫৪৩ আসন-বিশিষ্ট লোকসভায় কোন দল বা কোন জোট শেষ পর্যন্ত ঠিক কত আসন পায়, তা নিশ্চিতভাবে জানার জন্য আজ বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া কোনও গতি নেই।
এরকম টানটান উত্তেজনার মধ্যেই সকাল থেকে সারাদেশের গণনাকেন্দ্রগুলোতে ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিটের সিল খুলে ভোটগণনার কাজ শুরু হয়েছে।
দেশের প্রায় ১৪০ কোটি আবালবৃদ্ধবনিতা (যাদের প্রায় অর্ধেক এবারে ভোট দিয়েছেন) অধীর আগ্রহের সঙ্গে এই গণনার দিকে যেমন তাকিয়ে আছেন, তেমনি বিদেশের মাটিতেও অসংখ্য মানুষ নানা কারণে ভারতের নির্বাচনি ফলাফলের দিকে নজর রাখবেন।
ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে, দেশে এবারের লোকসভা নির্বাচন মোট ভোট পড়ার সংখ্যায় ‘সারা বিশ্বের সর্বকালের সব রেকর্ড’ ভেঙে দিয়েছে।
ভোটগণনার ঠিক আগে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করার রেওয়াজ না-থাকলেও সোমবার দুপুরে কিন্তু দিল্লির অশোকা রোডে কমিশনের সদর দফতরে ভারতের তিনজন নির্বাচন কমিশনারই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন।
সেখানে দেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, সাত দফা মিলিয়ে এবারের নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ৬৪ কোটি ২০ লক্ষেরও বেশি– যা একটি সর্বকালীন বিশ্বরেকর্ড। যদিও এবারের ভোটে দেশে মোট নথিভুক্ত ভোটার ছিলেন প্রায় ৯৭ কোটি।
রাজীব কুমার বলেন, ‘এটি আমাদের সবার জন্যই একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সবগুলো জি-সেভেন দেশ মিলিয়ে যত ভোটার, এই সংখ্যা তার দেড় গুণ। আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টা দেশ মিলিয়ে যত ভোটার, আমাদের সংখ্যা তার আড়াই গুণ! ফলে এই গণতন্ত্রের উৎসবে যারাই যোগ দিয়েছেন তাদের সবাইকে আমাদের ধন্যবাদ।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভারতের নির্বাচনকে একটি ‘মিরাকল’ বা অলৌকিক ঘটনা বলেও বর্ণনা করেন। তার কথায় ‘সারা বিশ্বে এর কোনও তুলনাই নেই।’
নির্বাচন কমিশন আরও জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোটগণনার সর্বশেষ ‘ট্রেন্ড’ ও ফলাফল জানা যাবে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে । এছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য ‘ভোটার হেল্পলাইন অ্যাপ’ নামে একটি বিশেষ অ্যাপও চালু করেছে তারা, যেটি গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাবে। সবশেষ ফলাফলের গতিপ্রকৃতি মিলবে এই অ্যাপেও।